বুধবার, জুন ৭, ২০২৩
The Report
বাল্যবিবাহ পাইকগাছা মডেল

বাল্যবিবাহ পাইকগাছা মডেল

টিএনএন ডেস্ক
প্রকাশের সময় : August 24, 2021 | সম্পাদকীয়

নোটারি পাবলিক দাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

দেশের আইন অনুযায়ী ২১ বছরের নিচে কোনো ছেলে এবং ১৮ বছরের নিচে কোনো মেয়ে বিয়ে করতে পারে না। এ ধরনের বিয়ে বাল্যবিবাহ হিসেবে গণ্য হবে এবং বর-কনের অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান আছে। এরপরও প্রকৃত বয়স লুকিয়ে নানা কৌশলে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে ও মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। করোনাকালে এ বাল্যবিবাহের প্রবণতা আরও বেড়েছে। এ বিষয়ে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন জরিপে যেসব তথ্য পেয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, খুলনার পাইকগাছায় ৯টি বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে নোটারি পাবলিকের তথাকথিত ঘোষণাপত্র দিয়ে। ছেলে-মেয়ের প্রকৃত বয়স যা-ই হোক না কেন, অসাধু আইনজীবীদের কাছ থেকে তাদের বয়স যথাক্রমে ২১ ও ১৮ বছরের ওপরে দেখানো হয়। এসব বিয়ের নোটারি পাবলিক যাঁরা করেছেন, তাঁদের কেউ কেউ দাবি করেছেন, তাঁরা জন্মসনদ দেখে ঘোষণাপত্রে সই করেছেন। এর অর্থ জন্মনিবন্ধন ও ঘোষণাপত্র দুটোই ভুয়া। এই ভুয়া ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে যদি অপ্রাপ্তবয়স্ক বালক-বালিকার বিয়ে হয়ে থাকে, তা কোনোভাবে বৈধতা পেতে পারে না।

 

পাইকগাছা উপজেলা কাজি সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল কাদির জানিয়েছেন, নিকাহ রেজিস্ট্রাররা কোনো বিয়ের নিবন্ধন করার সময় ছেলে-মেয়ের জন্মনিবন্ধন, স্কুল বা কলেজের সনদসহ বিভিন্ন বিষয় যাচাই করেন। যদি কারও বয়স কম থাকে, তাঁরা নিবন্ধন করাতে অস্বীকার করেন। এ অবস্থায় অভিভাবকেরা আইনজীবীর কাছ থেকে নোটারি পাবলিক বা ঘোষণাপত্র নিয়ে আসেন। ভুয়া জন্মনিবন্ধন নিয়ে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে ‘বিবাহের ঘোষণাপত্র’ নামের একটি লিখিত নথি তৈরি করেন তাঁরা।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ জুন থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত পাইকগাছায় ৯টি বাল্যবিবাহের ঘটনায় জরিমানা করেছে প্রশাসন। সব কটি ঘটনার ক্ষেত্রেই নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে কথিত বিয়ের ঘটনা ঘটেছে। কথিত নোটারি পাবলিকের ঘটনায় এক মা দুই আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন। তাঁর অভিযোগ, অপ্রাপ্তবয়স্ক প্রতিবন্ধী মেয়েকে অপহরণের পর কৌশল করে ‘বিয়ে’ দেওয়া হয়েছে।

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও স্বীকার করেছেন, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় উপজেলায় বাল্যবিবাহের সংখ্যা বেড়েছে। সে ক্ষেত্রে প্রতিকার কী? নোটারি পাবলিকের ঘোষণা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না, যদি না সেটি আদালতের অনুমোদন পায়। যে মা-বাবা সবকিছু জেনেও বাল্যবিবাহের নামে সন্তানের সর্বনাশ করেন, তাঁদের কেবল জরিমানা করে ছেড়ে দিলে হবে না। প্রয়োজনে আইনজীবীসহ বাল্যবিবাহের সঙ্গে জড়িত সবাইকে কারাগারে পাঠিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।